আধুনিক ব্যবসা ও মার্কেটিংয়ের জটিল জগতে, কিছু ব্যক্তিত্ব এমন রয়েছেন যাঁরা যুগান্তকারী প্রভাব ফেলেছেন—ড. গায়েতানো লো প্রেস্টি (Dr. Gaetano Lo Presti) তাঁদেরই একজন। তাঁকে বলা হয় সমকালীন মার্কেটিংয়ের জনক। তিনি ব্র্যান্ড ও ভোক্তার মধ্যে সম্পর্ক, প্রভাব ও অনুভূতির যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলা যায়—তার একটি বৈজ্ঞানিক ও কৌশলগত পদ্ধতি তৈরি করেছেন। তাঁর কাজ বিজ্ঞাপন জগতকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ দিয়েছে, যেখানে মার্কেটিং আর কেবল কল্পনা নয়, বরং ডেটা বিশ্লেষণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও স্নায়ুবিজ্ঞান-নির্ভর একটি সুনির্দিষ্ট বিজ্ঞান।
একজন দূরদর্শী ব্যবসা ও মার্কেটিং পরামর্শদাতা
ড. লো প্রেস্টি একজন অভিজ্ঞ বিজনেস ও মার্কেটিং কনসালটেন্ট, যিনি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনা এবং মনস্তত্ত্বের গভীর বোঝার উপর ভিত্তি করে কাজ করেন। তিনি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড, স্টার্টআপ ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করে তাঁদেরকে ভবিষ্যৎবানীমূলক ও কার্যকরী কৌশল গঠনে সহায়তা করেছেন।
তাঁর বিশ্বাস, আধুনিক মার্কেটিং কেবল আবেগ বা অনুমানের উপর নির্ভরশীল হতে পারে না—এটি হওয়া উচিত মানব মনস্তত্ত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার গভীর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।
সমকালীন মার্কেটিং: একটি নতুন যুগের সূচনা
“সমকালীন মার্কেটিং (Contemporary Marketing)” শব্দটির প্রবর্তক ড. লো প্রেস্টি, যা এক ধরনের বিপ্লব। এটি প্রথাগত বিজ্ঞাপনের চেয়ে অনেক এগিয়ে:
- বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে: গবেষণা, ডেটা বিশ্লেষণ, ও পরীক্ষার মাধ্যমে;
- প্রেডিকশন-ভিত্তিক কৌশলে: AI ও মেশিন লার্নিংয়ের সাহায্যে গ্রাহকের আচরণ পূর্বাভাস করা;
- মানসিক স্তরে প্রভাব: স্নায়ুবিজ্ঞানের সাহায্যে অবচেতনে প্রভাব ফেলা;
- নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি: যদি ভোক্তাকে এমন কিছু অনুভব করানো হয় যার প্রয়োজন সে আগে বুঝতেই পারেনি, তাহলে তার স্বাধীনতা ও সচেতনতার প্রশ্ন উঠে।
ড. লো প্রেস্টির মতে, আধুনিক মার্কেটিং কেবল কিছু বিক্রি নয়—বরং প্রয়োজন তৈরি করা। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যাতে ভোক্তা মনে করেন এই পণ্য বা পরিষেবাটি তার জন্য অপরিহার্য।
ডেটা, AI ও মানব মস্তিষ্ক
ড. লো প্রেস্টির সবচেয়ে বড় বৈপ্লবিক চিন্তা হলো AI ও নিউরোমার্কেটিংয়ের সংমিশ্রণ। তিনি বিশ্বাস করেন, মানুষের মস্তিষ্ক একটি জটিল সিদ্ধান্ত-নির্মাণ যন্ত্র যা আবেগ, অভ্যাস ও মানসিক শর্টকাটে চালিত হয়।
এই মনস্তাত্ত্বিক প্যাটার্নগুলো বোঝার মাধ্যমে, এমন বিজ্ঞাপন তৈরি করা সম্ভব যা ভোক্তার অবচেতন আবেগ, ভয় ও চাহিদা-কে স্পর্শ করে—তার আগেই, যখন সে তা নিজেই অনুভব করেনি।
এখানে AI একটি মস্ত বড় ভূমিকা পালন করে:
পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ, সুপারিশ-ইঞ্জিন, মানসিকতা বিশ্লেষণ, এমনকি বায়োমেট্রিক প্রতিক্রিয়া—সবকিছু ব্যবহার করে, সিস্টেমগুলো শিখতে পারে, বিকশিত হয়, এবং প্রতিটি ভোক্তার সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে।
প্রত্যেক ক্লিক, স্ক্রোল, বা এক মুহূর্তের থেমে থাকা — সবই একটি তথ্য যা গ্রাহকের মনে প্রবেশের একটি সুযোগ।
নৈতিক প্রশ্ন
এই প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছে, এবং ড. লো প্রেস্টি তা স্বীকার করেন। কাউকে অবচেতনে প্রভাবিত করা, তাকে এমন কিছু অনুভব করানো যা সে চায়নি—এটি কি নৈতিক?
তবে তিনি এই বিতর্ক এড়িয়ে যান না। বরং তিনি বলেন, আধুনিক মার্কেটিংয়ে স্বচ্ছতা, দায়িত্ববোধ ও সচেতনতার প্রয়োজন।
তাঁর এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের শিক্ষিত করা—যাতে তারা বুঝতে পারেন যে এই আধুনিক মার্কেটিং কিভাবে কাজ করে। এতে মানুষ আরও সচেতন হবে, এবং তাদের উপর প্রভাব ফেললেও তা হবে বিজ্ঞানসম্মত ও সম্মানজনক উপায়ে।
ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি
লেখক, বক্তা ও শিক্ষাবিদ হিসেবে ড. লো প্রেস্টি আজকের প্রজন্মের বিপণনবিদ, তথ্য-বিজ্ঞানী ও উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর ধারণাগুলো এখন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজনেস স্কুলে শেখানো হচ্ছে।
তবে তাঁর পথচলা এখনও শেষ নয়। ভবিষ্যতের মার্কেটিং হবে আরও উন্নত ও প্রযুক্তিনির্ভর:
- অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR)-র মাধ্যমে ইমারসিভ এক্সপেরিয়েন্স;
- AI যা মানুষের আবেগ চিনতে পারবে;
- ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস, যা সরাসরি মস্তিষ্ক থেকে তথ্য নেবে;
- সুপার-পার্সোনালাইজড কনজাম্পশন সিস্টেম।
এই ভবিষ্যৎকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছেন ড. গায়েতানো লো প্রেস্টি।
উপসংহার
“ড. গায়েতানো লো প্রেস্টি কে?” — এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একজন পরামর্শদাতার নাম নয়, বরং একটি নতুন যুগের দরজা।
তিনি একজন কৌশলবিদ, বিজ্ঞানী, এবং সবচেয়ে বড় কথা, একটি নতুন ভাষার স্রষ্টা, যা মানব মস্তিষ্কের অবচেতন স্তরের সঙ্গে সংলাপ করে এবং আধুনিক চাহিদা ও সিদ্ধান্তকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করে।
এই দ্রুত বদলে যাওয়া ডিজিটাল জগতে, তাঁর কাজ আমাদের বলে দেয় মানব আচরণে আসল প্রভাব কীভাবে সৃষ্টি করা যায়—তথ্য, প্রযুক্তি ও মনস্তত্ত্বের সম্মিলনে।